৬. রোগের শ্রেণীবিভাগ
১। একিউট বা অচির বা তরুন রোগ
২। ক্রণিক বা চির বা পুরাতন রোগ
তরুন রোগঃ যে সমস্ত রোগ হঠাৎ উপস্থিত হয়, দ্রুত জীবনীশক্তির পরিবর্তন
সাধন করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই হয় রোগীর জীবন নাশ করে- না হয় সমূলে
নিজেই (রোগ) দূরীভূত হয় তাকে তরুন রোগ বলে।
এই সকল রোগের কোন স্থিতিশীলতা নেই। এই রোগের ভোগকাল নির্দিষ্ট, এই নির্দিষ্ট
সময়ের মধ্যেই রোগের বিকাশ ও পরিণতি ঘটে (নিরাময় অথবা মৃত্যু)।
ঔষধ ছাড়াও তরুন রোগ আরোগ্য হয়, তবে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
তরুন রোগের ভোগকাল অল্পদিন অর্থাৎ ২/১ দিন হতে সর্বোচ্চ ২/১ মাস পর্যন্ত
হতে পারে।
তরুন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্তমান বিদ্যমান লক্ষণ ও তার কারণের
আলোকে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে এবং যে কারণে রোগটি হয়েছে তা থেকে বিরত থাকতে
হবে।
প্রধানত: মানসিক ও শারীরিক অনিয়মের ফলে বা স্বাস্থ্যবিধি লংঘনের ফলে
এই জাতীয় রোগ ব্যক্তিগতভাবে যে কোন মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।
উদাহরণঃ সর্দি, জ্বর, উদরাময়, কলেরা, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা,
গলক্ষত, বমি, এলার্জি, কাশি, কানে বেদনা, আধকপালে মাথাব্যথা, আঘাত, দংশন,
বিষক্রিয়া, কেটে যাওয়া, থেতলে যাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া যে সকল ক্রণিক বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধি পেয়ে প্রবল যন্ত্রণা সৃষ্টি
করে সেই রোগেও নতুন বা তরুন রোগের মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
যেমন: পুরাতন আমাশয় প্রবল আকার ধারণ করলে, হাঁপানীর টান বৃদ্ধি পেলে।
আর যে সকল রোগ তরুণ রোগের মত দেখা দেয়; কিন্তু চিকিৎসা করলে সাময়িক উপশম
হয়ে কিছুদিন পরে আবার ফিরে আসে সেই সকল রোগের চিকিৎসা ক্রণিক বা পুরাতন
রোগের মত গ্রহণ করতে হবে।
চিররোগঃ যে সমস্ত রোগের শুরুটা প্রায়ই জানা যায় না, ধীরে ধীরে সামান্য
শক্তিতে, অগোচরে আরম্ভ হয়ে বহুদিন ধরে জীবনীশক্তির বিকৃতি ঘটায় এবং দেহকে
এরূপ অন্ত:সারশূণ্য করে ফেলে যে প্রকৃত ঔষধ ব্যতীত জীবনীশক্তির নিজস্ব
প্রচেষ্টায় এর হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না তাকে চিররোগ বলে।
চিররোগ ধীরে ধীরে জীবনীশক্তিকে নষ্ট করতে থাকে এবং ঔষধ ছাড়া কখনও নিরাময়
হয় না।
চিররোগের কারণ অদৃশ্য, সহজে খুজে পাওয়া যায় না।
রোগের ভোগকালের কোন সময়সীমা নেই। রোগী আজীবন চিররোগে ভুগতে পারে। এই
রোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটায়।
হ্যানিম্যানের মতে, এই সকল রোগ উৎপত্তির মূল কারণ সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস,
টিউবারকুলেসিস নামক রোগবীজ বা মায়াজম।
বিভিন্ন ধরণের চিররোগের উদাহরণঃ
১। হৃদপিন্ডের পীড়া, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, একজিমা, এলারজি, বমিভাব,
মাথাব্যথা, পেশির আক্ষেপ।
২। সিফিলিস, বধিরতা, তোৎলামী, লিভারের সমস্যা, অস্থিক্ষত, গলক্ষত, মুখে
ঘা, পাকস্থলীতে ঘা, হাঁপানী, হিপাটাইটিস, ল্যারিনজাইটিস, দ্রুত হৃদস্পন্দন,
ওভারীর সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য, পুরাতন ডায়রিয়া, কার্বাঙ্কল, ক্যানসার,
মৃগী, পক্ষাঘাত, খর্বাকৃতি, ধবল বা শ্বেতী।
৩। হিস্টিরিয়া, হাঁপানী, মূত্রনালীর সংকীর্ণতা, মূত্রপাথুরী, একশিরা,
ফাইলেরিয়া, ডিপথেরিয়া, বসন্ত, যোনিকপাট বন্ধ, সন্ন্যাস, পেশী বাত, গেটে
বাত, সায়েটিকা, টাইফয়েড, টিউমার, ছানি, বাধক, ক্রণিক আমাশয়, হার্পিস,
ধ্বজভঙ্গ, স্মরণশক্তি হ্রাস, বাচালতা, বমিভাব, মাথাব্যথা, সর্দি ঝরা,
নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
৪। ক্যান্সার, স্ট্রোক, হুপিং কাশি, মেদপ্রবণতা, বিভিন্ন ধরণের টিউমার,
পুরাতন কাশি।
৫। সন্ন্যাস, কিডনী অকেজো, সোরাইসিস, অতি ক্ষুধা, ওজনহীনতা, কালা।
৬। শিশুদের কানের সংক্রমণ, ফ্লু, পিঠে ব্যথা, ঘাড় আড়ষ্টতা, হাত-পায়ে
আড়ষ্টতা।